মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৯:৩০ অপরাহ্ন

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে উজানের পানিতে বন্যার আশঙ্কা

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে উজানের পানিতে বন্যার আশঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

টানা বৃষ্টিপাতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী কয়েক দিন বন্যা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র। এই বন্যা খুব বেশি তীব্র হবে না এবং ‘সাময়িক’ হবে বলে আপাতত পূর্বাভাস দেয়া হলেও বৃষ্টিপাত বাড়লে বা ভারত থেকে উজানের পানি ছাড়া হলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে বর্তমান বৃষ্টির পরিস্থিতির হিসেবে করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন যে এই বন্যা আগামী চার-পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হবে না।

তবে বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বৃষ্টিপাতের ওপরই বন্যার সম্ভাবনা নির্ভর করে না। নদী ও হাওরের পানি ধারণক্ষমতার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু বিষয়ের ওপর বন্যা নির্ভরশীল। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার উজানে ভারতের বাঁধের পানি ছাড়া হলে বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

কাজেই বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্রের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করলেও বড় ধরণের বন্যার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

বৃষ্টিপাত ও বন্যার পূর্বাভাস সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
১৮ জুন সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে যে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কোথাও কোথাও ‘মাঝারি ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ’ হতে পারে।

ওই পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ‘বৃষ্টিপাত প্রবণতা বৃদ্ধি’ পেতে পারে।

এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত-সংলগ্ন ভারতের মেঘালয় রাজ্য ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত-সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাসে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, এখনো সিলেট অঞ্চলের কোনো নদীতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না।

হাসান বলেন, ‘আমি গতকাল বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো ঘুরেছি। এখনো কোনো জায়গাতেই বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে বিপদসীমার কাছাকাছি মাত্রায় প্রবাহিত হচ্ছে।’

তবে সিলেট এলাকায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘গত সাত দিনে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা এই মাসের মোট যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল সেটিকে পার করে গেছে। সাধারণত বছরের এই সময় এই পরিমাণ বৃষ্টি হয় না।’

তবে বৃষ্টিপাতের হার কমছে বলে জানান হাসান। তিনি বলছিলেন ১৫ জুন ২৪০ মিলিমিটার, ১৭ জুন ১০৯ মিলিমিটার ও ১৮ জুন ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে।

তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেও গত বছরের মতো মারাত্মক বন্যার সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা প্রকাশ করেন হাসান।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়াও বলছিলেন যে সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এখনই গত বছরের মতো তীব্র বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীতে ‘হঠাৎ করে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে’ বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘তিস্তার দিকে যেটা হয়, উজানে বৃষ্টিপাত বেশি হলে তারা ব্যারেজ খুলে দেয় এবং তখন পানি এদিকে চলে আসে। এই ব্যারেজ তারা কখন খুলে দেবে, ওই বিষয়ে আমরা কিছু জানতে পারি না। তাই অনেক সময় আমাদের এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার শিকার হই।’

তিনি আরো বলেন, ‘তিস্তার উজানে কয়েক দিন ধরে বেশ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পানি বেড়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। আমরা একটি অ্যালার্ট দিয়ে রেখেছি যে হঠাৎ করে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।’

‘তীব্র বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না’
বাংলাদেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত আগামী কয়েক দিন কমে এলেও বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘শুধু বৃষ্টিপাতের ওপর বন্যা নির্ভর করে না। নদী ও হাওরের পানি ধারণক্ষমতার ওপরও বন্যা নির্ভর করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া আমাদের নদীর চ্যানেলগুলোতে পানি চলাচলের ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গেছে। পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে, অনেক জায়গায় চর পড়েছে, হাওর অনেক জায়গায় ভরে ফেলা হয়েছে, পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তা হয়েছে। এগুলোর ফলে আগে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারলেও এখন পানি নেমে যেতে বেশি সময় লাগে।

এসব কারণে বর্ষায় বাঁধ তৈরি, নদী খনন করে তলদেশ থেকে ময়লা উত্তোলনের মতো পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন ইসলাম।

ইসলাম আরো বলেন, উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র বেসিনে হঠাৎ করে পানির মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বন্যার সম্ভাবনা থাকেই। ভারতের নীতিই হচ্ছে বর্ষায় ব্যারেজের সব গেট খুলে রাখা। সেখানে বন্যা হবেই।

উত্তরাঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস আগে থেকে জানতে ভারতের কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন ইসলাম।

তিনি বলেন, ভারত কবে তিস্তা ব্যারেজের গেট খুলতে পারে, এমন তথ্য আগে থেকে জানা থাকলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বন্যার প্রস্তুতি নেয়া সহজ হবে।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877